ওয়ারেন, ১৪ জানুয়ারী : আজ পৌষ সংক্রান্তি। উৎসবপ্রিয় ভোজনরসিক বাঙালির বারো- মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে আরও এক পার্বণ হলো পৌষ-সংক্রান্তি। পৌষ সংক্রান্তিকে 'মকর সংক্রান্তি' বা 'উত্তরায়ণ সংক্রান্তি'ও বলা হয়। । এই পার্বণের অর্থ হলো পিঠে পুলির উৎসব।
পৌষ পার্বণ বা মকর সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে বিশেষ একটি দিন। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পৌষ মাসের শেষ দিনে এই উৎসবটি পালন করা হয়। হিন্দু শাস্ত্র মতে পৌষ পার্বণ দিনটি অত্যন্ত পুণ্যকর দিন বলে মনে করা হয়। এদিন সকাল থেকেই ঘরে ঘরে শুরু হয়ে যায় উৎসবের আমেজ। যা মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে চলতে থাকে।
অনন্ত কাল ধরে সময় প্রবাহমান। সময়ের এই প্রবাহ যতই বেড়ে চলছে সৌরজগতের বয়স তথা পৃথিবীর বয়সও ততই বেড়ে চলেছে। যার ফলে আজ যেটা নূতন কাল সেটা নুতনত্ব হারিয়ে পুরাতন হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু যেন অতীতের দিকে ধাবিত হয়ে চলছে। কিন্তু প্রকৃতির প্রবাহমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানুষ বর্ষপঞ্জি বেঁধে দেওয়ায় সময় বার বার ফিরে আসে। তাই গ্রীষ্মকাল অতিবাহিত হলেই বর্ষা, বর্ষার পর শরৎ এভাবে হেমন্ত, শীত ও বসন্ত কাল আসতে থাকে। সেরকম বাংলা বারোটি মাসও আবর্তিত হতে থাকে। এই আবর্তনে প্রতিমাসের শেষ দিন অর্থাৎ যে দিন মাস পূর্ণ হবে সে দিনকে সংক্রান্তি বলা হয়। এভাবে বারোটি মাসে বারোটি সংক্রান্তির মধ্যে বিশেষ ভাবে পৌষমাসের সংক্রান্তি উল্লেখ্যযোগ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই দিনটিতে অশুভ শক্তি শেষ হয়ে শুভ শক্তির সূচনা হয়। এছাড়াও এইদিন সূর্য মকর রাশিতে গমন করে বলে দিনটিকে শুভ মনে করা হয়।
সপ্তাহখানেক আগে থেকেই পৌষ সংক্রান্তির প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে যায়। পৌষ সংক্রান্তিতে মূলত চালের গুড়ো, ময়দা, নারকেল, দুধ, গুড় বিভিন্ন ধরনের পিঠে তৈরি করা হয়। সেই সঙ্গে এই মকর সংক্রান্তি উৎসবে তিল, কদমা খাওয়ারও রীতি আছে বাঙালি ঘরে। তবে এই উৎসবের মাহাত্ম্য হিন্দু পরিবারের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
মকর সংক্রান্তি তিথির প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি পার্বণ হল বুড়ির ঘর বা বেড়াবেড়ির ঘর। পৌষ সংক্রান্তির আগের রাতে মূলত কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েরা খড় দিয়ে ছোট ঘর তৈরি করে। অনেক সময় তাদের সহযোগিতায় কাজে হাত লাগান বড়রাও। এ ঘরের পাশে মাছ, মাংস, ডিম রান্না করে চড়ুই ভাতির মতো খাওয়া দাওয়া করে এবং রাত্রি যাপন করে। খুব ভোরে উঠেই স্নান করে নতুন পোশাক পরিধান কর ওইঘর পুড়িয়ে আগুন পোহায়। ২/১ বছর ধরে মিশিগানেও এই রীতির প্রচলন লক্ষ্য করা গেছে।
পৌষ পার্বন এখন আর ভারত কিংবা বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎসবের আমেজে ধর্মীয় রীতি মেনে পালন করা হয় এই উৎসব। প্রবাসে উৎসব পার্বনে দেশের মতো আনন্দ নেই। তবে, প্রবাসীদের উৎসব আনন্দটা হয় ভিন্ন রকম, অন্য রকম। এদিকে পৌষ পার্বন উপলক্ষে ওয়ারেন সিটির শিব মন্দির টেম্পল অব জয়, মিশিগান কালিবাড়ি এবং ডেট্রয়েট দুর্গা টেম্পল বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচীর রয়েছে নাম সংকীর্তন, হরির লুট, পিঠা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পুরষ্কার বিতরণ প্রভৃতি।
শিব মন্দির
নানা অয়োজনে পৌষ সংক্রান্তি পালন করবে নগরীর শিব মন্দির-টেম্পল অব জয়। ইতিমধ্যে মন্দির কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ১৯ জানুয়ারী রোববার বেলা ১১ টায় বিশেষ পূজা ও গীতা পাঠের মাধ্যমে শুরু হবে পিঠা উৎসব। অন্যান্য কর্মসুচির মধ্যে রয়েছে নাম সংকীর্তন, পিঠা প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণ। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের কমপক্ষে ৩০টি পিঠা আনতে হবে।
মিশিগান কালিবাড়ি
পিঠা বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অঙ্গ। আর এই পিঠার ঐহিত্য ধরে রাখতে প্রতি বছরের মতো এবারও পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে মিশিগান কালিবাড়িও। ১৯ জানুয়ারী দুপুর ১২টায় পূজা, ২টায় প্রার্থনা ও আরতি, দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে পিঠা উৎসব। চাঁদা হার নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ ডলার। অথবা ২০টির অধিক পিঠা আনতে হবে।
ডেট্রয়েট দুর্গা টেম্পল
ডেট্রয়েট দুর্গা টেম্পলে আগামী ২৬ জানুয়ারী সকাল সাড়ে ১০ টায় পিঠা উৎসব শুরু হবে। পৌষ পার্বন উপলক্ষে এদিন নগর কীর্তন, নগর পরিক্রমা ও পিঠা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। বিজয়ীদের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan